বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখো এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর জীবন আজ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বাড়িভাড়া ভাতা ও মেডিকেল সুবিধার অপ্রতুলতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলে ২০২৫ সালে সারা দেশে শুরু হয়েছে এক ঐতিহাসিক আন্দোলন — MPO House Rent Allowance, যা আজ জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
প্রেক্ষাপট ও কারণ
“MPO” বা Monthly Pay Order হলো সরকারের একটি নীতিমালা, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সরকার বহন করে।
তবে বেতন কাঠামোতে বাড়িভাড়া ও মেডিকেল ভাতা এতটাই অল্প যে বাস্তব জীবনযাত্রার খরচের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বর্তমানে অধিকাংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শহর ও মফস্বলে বাড়ি ভাড়ার চাপ সামলাতে গিয়ে মাসের শেষে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন।
শিক্ষকদের দাবি –
- মূল বেতনের ২০% বাড়িভাড়া ভাতা
- মেডিকেল ভাতা ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ
তাদের মতে, এটি কোনো অতিরিক্ত দাবি নয়; বরং জীবিকা রক্ষার ন্যায্য আবেদন।
একজন কলেজ শিক্ষক বলেন-
“আমরা মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাই। কিন্তু ভাড়াই দিতে হয় ১০ হাজারের বেশি। তাহলে সংসার চলবে কিভাবে?”
সরকারের অবস্থান ও প্রস্তাব।MPO House Rent Allowance
সরকার ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা দেয় যে, বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করা হবে।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের মতে, এটি একেবারেই অবাস্তব ও অপ্রতুল।
তারা বলছেন –
“বর্তমান বাজারে পণ্যমূল্য ও ভাড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই বৃদ্ধিতে কোনো বাস্তব উপকার হবে না।”
শিক্ষকদের এই ক্ষোভ দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উৎস: Kaler Kantho, Bangla Tribune, Samakal
আন্দোলনের ধরণ ও কার্যক্রম
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় MPO Teachers House Rent Allowance 2025।
নিচে আন্দোলনের ধাপগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১️। সমাবেশ ও র্যালি
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা শহরে শিক্ষক সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ করছে।
তাদের পোস্টারে লেখা ছিল— “ন্যায্য ভাতা চাই, বাঁচার মতো জীবন চাই!”
২️। লগাতার অবস্থান কর্মসূচি (Sit-in)
ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শিক্ষকরা দিনরাত অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন।
৩️। আইনি নোটিশ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
দাবি মেনে না নিলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
৪️। আল্টিমেটাম ও কর্মবিরতি হুমকি
শিক্ষকরা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এরপরও দাবি না মানলে ক্লাস বর্জন ও কর্মবিরতি শুরু করার হুমকি দিয়েছেন।
উৎস: Bangla Tribune, Samakal, Facebook Teachers Forum
চ্যালেঞ্জ ও বাধা । MPO House Rent Allowance
এই আন্দোলনের বাস্তবায়নে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে —
- বাজেট সীমাবদ্ধতা: সরকার বলছে, হঠাৎ বড় অঙ্কের বাড়িভাড়া ভাতা বাস্তবায়ন বাজেট ভারসাম্যে চাপ ফেলবে।
- নীতিগত প্রক্রিয়া: সরকারি অনুমোদন ও অর্থ বিভাগের নীতিমালা সংশোধন করতে সময় লাগে।
- শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভাব: দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তবে শিক্ষকরা বলছেন —
“আমরা ক্লাস বন্ধ করতে চাই না, কিন্তু অন্য কোনো পথও খোলা নেই।”
সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রভাব।MPO House Rent Allowance
এই আন্দোলন কেবল একটি আর্থিক দাবির বিষয় নয়; এটি শিক্ষা খাতে সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রূপ নিয়েছে।
- শিক্ষকদের দাবি পূরণ হলে তারা আর্থিক নিরাপত্তা পাবে, যা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
- শিক্ষকদের পেশাগত সন্তুষ্টি বাড়বে, এবং তারা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও নিবেদিত হবেন।
- অন্যদিকে, দাবি উপেক্ষিত হলে শিক্ষক সমাজে হতাশা ও অবিশ্বাস বাড়বে, যা শিক্ষা খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষও মতামত জানাচ্ছেন।
অনেকেই মন্তব্য করছেন —
“যারা জাতি গঠন করেন, তাদের যদি বেঁচে থাকার ভাতা না থাকে, তবে উন্নয়নের স্লোগান অর্থহীন।”
অভিভাবক মহলেও সহানুভূতির সুর শোনা যাচ্ছে। অনেকেই সরকারের কাছে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও নীতিগত দিকনির্দেশনা । MPO House Rent Allowance
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আন্দোলন সরকারের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
শিক্ষা খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের আর্থিক মর্যাদা পুনঃনির্ধারণ জরুরি।
🔹 প্রস্তাবনা হিসেবে বলা যায় —
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র ভাতা কাঠামো প্রণয়ন
- নিয়মিত ভাতা পুনঃমূল্যায়ন নীতি
- শহর ও গ্রামের জন্য ভিন্ন ভাড়া হার নির্ধারণ
- মেডিকেল ও পরিবহন ভাতা একীভূত করে একটি Teacher Welfare Allowance তৈরি
উপসংহার
“MPO Teachers House Rent Protest 2025” শুধু বাড়িভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলন নয় — এটি ন্যায্যতার লড়াই, সম্মানের লড়াই এবং শিক্ষকের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
শিক্ষকরা জাতির আলোকবর্তিকা।
তাদের দাবি উপেক্ষা করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা অবকাঠামোকে দুর্বল করা।
অতএব, সরকারের উচিত হবে দ্রুত ও বাস্তবসম্মত সমাধান এনে শিক্ষকদের মুখে হাসি ফিরিয়ে দেওয়া।

সম্পাদকঃ
মোঃ নাইয়ার আযম, সহকারী অধ্যাপক(পদার্থবিজ্ঞান), মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর।

নাইয়ার আযম একজন নিবেদিতপ্রাণ পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর এ কর্মরত আছেন এবং Studentbarta.com-ওয়েব সাইডের সম্পাদক। তিনি শিক্ষা ও অনলাইন শিক্ষার প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার মতো চিন্তাশীল লেখা প্রকাশ করেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ক্যান্ট পাবলিক স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে তিনি কারমাইকেল কলেজ, রংপুর-এ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। বর্তমানে রংপুর সিটি-তে বসবাসরত নাইয়ার আযম সবসময় শিক্ষা, অনলাইন লার্নিং এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে আগ্রহী। পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞানকে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন এবং আধুনিক শিক্ষার সুযোগ প্রসারে তিনি বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।