StudentBarta.com/Breaking News ডেক্স
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ)। এটি কেবল একটি সংগঠন নয়, বরং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখান থেকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সচেতনতা অর্জন করে, তার কেন্দ্রে থাকে ডাকসু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি হবে ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

ডাকসু কি?-What is DUCSU?
ডাকসু বা Dhaka University Central Students’ Union (DUCSU) হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ। এটি মূলত শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সমস্যা সমাধান, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালনা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা শেখানোর জন্য গঠিত।
ডাকসুর গুরুত্ব এতটাই বেশি যে এটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। ডাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাস্তব চর্চা শিখে।
ডাকসুর ইতিহাস– History of DUCSU
- ডাকসুর ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে গাঁথা।
- প্রতিষ্ঠা: ১৯২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নে গঠিত হয়।
- ভূমিকা: পাকিস্তান আমলের ছাত্র আন্দোলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-এই সব ঘটনায় নেতৃবৃন্দ সক্রিয় ছিলেন।
- ভাষা আন্দোলন: ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ।
- মুক্তিযুদ্ধের সময়: ১৯৭১ সালে নেতারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেন এবং স্বাধীনতার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
- স্বাধীনতার পর: স্বাধীন বাংলাদেশের পরেও ডাকসু রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল- তবে অনিয়ম ও প্রশাসনিক বাধার কারণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নিয়মিত নির্বাচন হয়নি।

ডাকসুর সদস্য সংখ্যা-DUCSU member numbers
- ডাকসুতে মোট ২৫টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো:
- ভাইস প্রেসিডেন্ট (VP)
- জেনারেল সেক্রেটারি (GS)
- অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি (AGS)
- সাংস্কৃতিক সম্পাদক
- ক্রীড়া সম্পাদক
- বিতর্ক সম্পাদক
- সমাজসেবা সম্পাদক
- প্রতিটি হল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি
- ডাকসু শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয় পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংসদ হিসেবে কাজ করে।
ডাকসু নির্বাচন
- ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
- ভোটার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী
- ভোট প্রদানের পদ্ধতি: প্রত্যেক ভোটার সরাসরি ভোট প্রদান করে প্রতিনিধি নির্বাচন করেন।
- প্রার্থী: প্রার্থী হতে হলে অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হবে।
নির্বাচন বিতর্ক-DUCSU Election
ডাকসু নির্বাচন সবসময় বিতর্কিত থেকেছে। কেন্দ্র দখল, ভোটার তালিকায় সমস্যা, দখলবাজি-এগুলো বিষয়গুলি সময়ের সঙ্গে সাধারণ ঘটনা। তবে শিক্ষার্থীরা সবসময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।

ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাস-History of DUCSU elections
১৯২২-১৯৭১: প্রতিষ্ঠা ও সংগ্রাম
ডাকসুর প্রথম নির্বাচন ১৯২২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলের সময়ে ডাকসু হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান ক্ষেত্র। ভাষা আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১৯৭১-২০১৯: স্বাধীনতার পর-After independence
স্বাধীনতার পর ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অনেকটা থেমে যায়। প্রশাসনিক বাধা এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে ২০১৯ সালের আগে দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসুর নির্বাচন হয়নি।
২০১৯ নির্বাচন
- ভিপি নির্বাচিত: নুরুল হক নুর
- বিতর্ক: ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্সে অনিয়ম, ছাত্র সংঘর্ষ
- গুরুত্ব: শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা পুনরায় সক্রিয় করা
- ডাকসুর বর্তমান প্রেক্ষাপট–Current context of DUCSU

২০২৫ সালে শিক্ষার্থীরা আবারও ডাকসু নির্বাচনের দাবি করছে। শিক্ষার্থীরা চায়-
- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
- প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত ভোট
- প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ
- ছাত্ররাজনীতির সঠিক চর্চা
ডাকসু পুনরায় সক্রিয় হলে শিক্ষার্থীরা শুধু নেতৃত্ব শেখার সুযোগই পাবে না, বরং দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতেও সহায়তা করবে।
ডাকসু নির্বাচন-২০২৫ইং। DUCSU Election-2025
- নির্বাচনের তারিখ ও সময়সূচি
- নির্বাচনের তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা: ২০ আগস্ট ২০২৫
- মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা: ১৯ আগস্ট ২০২৫
- নির্বাচনের তারিখ ও সময়সূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রার্থী ও প্যানেল । Candidates and Panel
ডাকসু নির্বাচনে এবার ২৮টি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। মোট ৬৫৮ জন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে ১০৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
প্রধান প্যানেলসমূহ: । Main panels:
- প্রতিরোধ পর্ষদ: বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর যৌথ প্যানেল।
- স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য: গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল।
- ডাকসু ফর চেঞ্জ: ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত প্যানেল।
নারী প্রার্থিতা । Women’s candidacy
ডাকসু নির্বাচনে এবার ৬২ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন, যা মোট প্রার্থীর ১৩%। তবে, ভিপি ও জিএস পদে নারী প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এটি নারী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা নির্দেশ করে।

নির্বাচন সংক্রান্ত আইনগত বিষয় । Election-related legal issues
হাইকোর্টের একটি আদেশে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। তবে, আপিল বিভাগ সেই আদেশ স্থগিত করে ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের আয়োজনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
প্রচার ও প্রচারণা । Promotion and advertising
নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে ২৬ আগস্ট থেকে। প্রার্থীরা বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন, যেমন টাকার আদলে লিফলেট ছাপিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করা।
ডাকসুর গুরুত্ব ।Importance of DUCSU
ডাকসু শিক্ষার্থীদের জন্য কেবল একটি সংসদ নয়, বরং শিক্ষার বাইরে নেতৃত্ব, নেতৃত্বের মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা অর্জনের কেন্দ্র।
DUCSU is not just a parliament for students, but also a center for acquiring leadership, leadership values, and social awareness beyond education.
গুরুত্বের মূল দিক: ।Key aspects of DUCSU’s importance:
- গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব তৈরি করে
- শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করে
- সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে
- জাতীয় আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিশ্চিত করে
- ছাত্রদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার মান তৈরি করে
নেতা ও প্রভাব । leaders and influence
ডাকসু থেকে উঠে আসা বহু নেতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের নেতা । Leader of the Liberation War
- সংবিধান রচনাকারী প্রভাবশালী শিক্ষার্থী নেতারা
- বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রনেতা
- এই নেতাদের প্রভাব শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং পুরো দেশকে প্রভাবিত করেছে।
ডাকসু শুধুমাত্র একটি ছাত্র সংসদ নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটির ইতিহাস গৌরবময়, তবে অনিয়ম ও স্থবিরতা অনেকবার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা দাবি করছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ডাকসু নির্বাচন। এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা আরও শক্তিশালী হবে।
ডাকসু শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার বাইরে নেতৃত্ব, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা শেখার সেরা প্ল্যাটফর্ম
Because,,ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এটি ছাত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে।
আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান বা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আপডেট পেতে চান, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন: ducsu.du.ac.bd
বিস্তারিত জানতে www.StudentBarta.com ওয়েব সাইডটি ভিজিট কর।
রাইটারঃ Mst. Kulsum Aktar Shimu
সম্পাদকঃ
মোঃ নাইয়ার আযম,সহকারী অধ্যাপক-পদার্থবিজ্ঞান, মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর।

নাইয়ার আযম একজন নিবেদিতপ্রাণ পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর এ কর্মরত আছেন এবং Studentbarta.com-ওয়েব সাইডের সম্পাদক। তিনি শিক্ষা ও অনলাইন শিক্ষার প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার মতো চিন্তাশীল লেখা প্রকাশ করেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ক্যান্ট পাবলিক স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে তিনি কারমাইকেল কলেজ, রংপুর-এ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। বর্তমানে রংপুর সিটি-তে বসবাসরত নাইয়ার আযম সবসময় শিক্ষা, অনলাইন লার্নিং এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে আগ্রহী। পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞানকে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন এবং আধুনিক শিক্ষার সুযোগ প্রসারে তিনি বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।