StudentBarta.com/ Life stories ডেক্স
জীবন কখনোই সহজ নয়। আমরা অনেকেই স্বপ্ন দেখি, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় এবং ধৈর্য। অনেকেই বাধার সামনে দাঁড়িয়ে ভেঙে পড়ে, আবার অনেকেই সেই বাধাকে পাথেয় বানিয়ে এগিয়ে যায়। আজকের গল্প ঠিক তেমনই একজন মানুষের, যিনি গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও কেরোসিনের ক্ষীণ আলো থেকে শুরু করে ডাক্তার হয়ে উঠেছেন। এই গল্প শুধু অনুপ্রেরণা নয়, বরং প্রমাণ যে- “চাইলে সব সম্ভব।”
শৈশব: সংগ্রামের শুরু
রুবেলের জন্ম হয় এক অজপাড়া গাঁয়ে। পরিবারে ছিলো ছয় ভাইবোন। বাবা ছিলেন দিনমজুর আর মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেক সময় ভাতের সাথে শুধু লবণ বা মরিচ খেয়ে দিন কাটাতে হতো।
বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রাত হলেই পুরো গ্রাম অন্ধকারে ঢেকে যেত। ছোট্ট রুবেল তখন কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে বই খুলতো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসতো, ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হতো, তবুও পড়াশোনা থামাতো না।
গ্রামের অনেকেই তাকে দেখে হাসতো। বলতো-
“এই ছেলে ডাক্তার হবে? কেরোসিনের আলোয় ডাক্তার হওয়া যায় নাকি?”
কিন্তু রুবেল জানতো, স্বপ্নের পেছনে ছুটতে হলে মানুষের কথায় কান দিলে চলবে না।
কৈশোর: দ্বিগুণ পরিশ্রম
স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সংসারে কাজ করতে হতো। সকালে গরু চরানো, মাঠে বাবাকে সাহায্য করা-এসব শেষ করে দুপুরে স্কুলে যেত। অনেক সময় বই কেনার টাকা থাকতো না। তখন বন্ধুর কাছ থেকে বই ধার নিয়ে রাতভর কপি করতো।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সে দেখলো, পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সেই দৃশ্য দেখে রুবেলের ভেতরে তীব্র বেদনা তৈরি হলো। সে মনে মনে শপথ নিলো-
“আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। গরিব মানুষদের জন্য কিছু করবো।”
প্রথম ব্যর্থতা ও নতুন শুরু

এই স্বপ্ন পূরণের জন্য রুবেল কঠোর পরিশ্রম করে এসএসসি ও এইচএসসি ভালো রেজাল্ট করলো। এরপর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নিলো। কিন্তু প্রথমবার ব্যর্থ হলো।
পুরো গ্রাম যেনো তখন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করলো। কেউ কেউ বললো-
“এবার চাষবাস শুরু কর, পড়াশোনার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”
এই কথাগুলো শোনার পরও রুবেল ভেঙে পড়েনি। বরং ব্যর্থতাকে শক্তি হিসেবে নিলো। দ্বিতীয়বার আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলো। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করলো। বন্ধুরা যখন খেলাধুলা করতো, সে তখন বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতো।
অবশেষে তার পরিশ্রম সফল হলো। সে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলো।
স্বপ্ন পূরণের পথে
মেডিকেল কলেজের জীবন সহজ ছিল না। খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। অনেক সময় খাবারের টাকাও জোগাড় হতো না। তখন সে টিউশনি করতো, কখনো আবার বই বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতো।
কিন্তু প্রতিটি কষ্টই যেনো তাকে আরও শক্ত করে তুলেছিল। ধীরে ধীরে পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করতে শুরু করলো। শিক্ষকরা তার অধ্যবসায় দেখে মুগ্ধ হতেন।
বছরের পর বছর সংগ্রাম শেষে অবশেষে সে ডাক্তার হলো।
বর্তমান: গ্রামের “আমাদের ডাক্তার”

আজ সেই রুবেলই একজন সফল চিকিৎসক। শহরে বড় হাসপাতাল থেকে ডাক এলো, কিন্তু সে ফিরিয়ে দিলো। কারণ সে জানতো, তার গ্রামে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না।
তাই সে গ্রামের পাশেই একটি ছোট্ট চেম্বার খুললো। গরিব রোগীদের কাছ থেকে সে টাকা নেয় না। শুধু একটাই কথা বলে-
“আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। সেটাই আমার ফি।”
গ্রামের মানুষরা এখন তাকে ভালোবেসে ডাকেন- “আমাদের ডাক্তার।”
জীবনের শিক্ষা
রুবেলের জীবনের গল্প আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়-
- পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে অসম্ভব কিছু নেই।
- ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, বরং নতুন করে শুরু করার সুযোগ।
- অভ্যাস ও নিয়মিত চেষ্টা মানুষকে সফল করে তোলে।
- সমাজ যাই বলুক, নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে এগোতে হবে।
- সফলতা কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজ ও মানুষের জন্যও হওয়া উচিত।
সমাপ্তি
কেরোসিনের আলোয় পড়া সেই ছোট্ট রুবেল আজ গরিব মানুষের ভরসার জায়গা। তার জীবন কাহিনি প্রমাণ করে, দারিদ্র্য কখনো স্বপ্নকে হারাতে পারে না। বরং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে, কোনো অভাব-অনটনই মানুষকে থামাতে পারে না।
যে কেউ তার গল্প পড়ে বুঝতে পারবে-
“আমারও যদি স্বপ্ন থাকে, আমি তা পূরণ করতে পারবো। কেবল হাল ছাড়লে চলবে না।”
রাইটারঃ Mst. Kulsum Akotar Shimu
সম্পাদকঃ
মোঃ নাইয়ার আযম, সহকারী অধ্যাপক(পদার্থবিজ্ঞান), মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর।

নাইয়ার আযম একজন নিবেদিতপ্রাণ পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। তিনি মজিদা খাতুন মহিলা কলেজ,রংপুর এ কর্মরত আছেন এবং Studentbarta.com-ওয়েব সাইডের সম্পাদক। তিনি শিক্ষা ও অনলাইন শিক্ষার প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার মতো চিন্তাশীল লেখা প্রকাশ করেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ক্যান্ট পাবলিক স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে তিনি কারমাইকেল কলেজ, রংপুর-এ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। বর্তমানে রংপুর সিটি-তে বসবাসরত নাইয়ার আযম সবসময় শিক্ষা, অনলাইন লার্নিং এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে আগ্রহী। পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞানকে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন এবং আধুনিক শিক্ষার সুযোগ প্রসারে তিনি বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।